মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬

বনশ্রীর দুই শিশু হত্যায় মায়ের স্বীকারোক্তি: পরিবার মানতে পারছে না!

বনশ্রীর দুই শিশু হত্যায় মায়ের স্বীকারোক্তি: পরিবার মানতে পারছে না! স্বদেশসময়২৪.কম, ঢাকা: রাজধানীর বনশ্রীতে দুই শিশু খুনের ঘটনায় মায়ের দেয়া জবানবন্দী পরিবার মানতে পারছে না। অপর দিকে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণও ওই দুই শিশুর মায়ের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না।
তারা বলছেন, এখনো ঘটনাটির তদন্ত শেষ হয়নি। আমাদের আরো কিছু কাজ রয়েছে। আর আদালতেরও কিছু বিষয় রয়েছে। ওই সব কাজগুলো শেষ হতে আরো সময় লাগবে বলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ।
দুই সন্তানের মা মাহফুজা মালেক ওরফে জেসমিন র‌্যাবের হাতে আটকের পর পরই হত্যার দায় স্বীকার করেন। এরপর রামপুরা থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একইভাবে তার সন্তানদের নিজ হাতে খুনের স্বীকারোক্তি দেন। এরপর মামলাটি গোয়েন্দা কার্যালয়ে তদন্তের জন্য যায়। গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নেন। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে একই তথ্য প্রদান করেন। এরপর আদালতে তার গর্ভের দুই শিশু সন্তানকে নিজ হাতে হত্যা করেছেন বলেও দায় স্বীকার করেন শিশুর মা জেসমিন।

তবে জেসমিনের এই স্বীকারোক্তির বিষয়ে তার পরিবার আত্মীয়-স্বজন, বিশেষজ্ঞমহল এমন কী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। তারা বলছেন, অন্য কেউ তাকে মানষিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যিনি তার সন্তানদের নিজের জীবনের চেয়েও বেশী মায়া করতেন। তিনি কীভাবে ফুটফুটে এক শিশুকে নিজ হাতে খুনের পর অপরজনকে খুনতে পারেন! এটা আসলেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাই এই খুনের বিষয়ে অন্য কোনো কারণ অথবা অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারে।

তবে ঘটনার পর র‌্যাব দুই শিশুর মা জেসমিনকে রামপুরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি তারা। এরপর মামলাটি ডিবিতে যায়। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায়। আদালতে শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন বাতিল করে পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগেই র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে দুই শিশুর মা জেসমিন জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু দিন আগে থেকেই তিনি অনেক বিরক্তি অনুভব করতেন। একপর্যায়ে নিজেই দুই সন্তান নুসরাত আমান অরণি ও আলভী আমানকে হত্যা করেছেন।

তবে র‌্যাব ও পুলিশের কাছে দুই শিশু সন্তানকে নিজে হত্যার কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা তার মধ্যে লক্ষ্য করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। আর এই জন্য তার দেয়া বক্তব্যও তারা বিশ্বাস করতে পারেননি।

এদিকে এই চাঞ্চল্যকর এই খুনের আসল মোটিভ কী এবং প্রকৃত খুনী সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

শিশুদের বাবার ব্যবসায়িক বিরোধ, সম্পত্তির বিরোধ বা অন্য কোনো বিষয় নিয়েও জেসমনি বা তার স্বামী আমানউল্লাহ আমানের কোনো বিরোধ ছিলো কি-না তাও খতিয়ে দেখেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাগণ। কিন্তু তারা দুই শিশু হত্যার রহস্যের কোন কুলকিনারাই করতে পারেনি। আর ঘটনাটি পরকীয়ার কারণে ঘটেছে কি-না, তাও নিশ্চিত হতে তদন্ত করে পুলিশ। এ বিষয়ে জেসমিন ও তার স্বামী আমান উল্লাহকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু পরকীয়ার কোনো তথ্যই তারা পাননি। শুধু তাই নয়, তদন্ত কর্মকর্তাগণ আমান-জেসমিন দম্পতির মোবাইলফোনের কললিস্ট বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করছেন। কিন্তু পরকীয়ার কোনো আলামত্ই পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। তারপরও পরকীয়ার বিষয়টি তারা সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক শীর্ষ নিউজকে বলেন, ওই দুই শিশুর মা জেসমিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, প্রকৃত রহস্য বের হতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

দুই শিশু চাচা আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শীর্ষ নিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি এখনো মেনে নিতে পারছি না। আমি এখন গাড়িতে পরে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।

এই চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত তদারক গোয়েন্দা পুলিশের ডিএমপি পূর্ব বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান শীর্ষ নিউজকে বলেন, এই মামলার তদন্তসহ বেশ কিছু কাজ এখনো শেষ হয়নি। আর আদালতের কিছু বিষয় রয়েছে। ওই সব বিষয়ের পর চার্জশিট দেওয়া হবে। আর এরজন্য বেশ কিছু সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বনশ্রীর বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির ৫/এ ফ্ল্যাট থেকে অচেতন অবস্থায় দুই শিশুকে উদ্ধারের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এসময় দুই শিশুর পরিবার তাদের মৃত্যুর জন্য স্থানীয় একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্ট থেকে আনা খাবারের বিষক্রিয়ার কথা বলেন। কিন্তু এর পরের দিন ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর র‌্যাবের একটি দল জামালপুর গ্রামের বাড়ি থেকে দুই শিশুর মা-বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের পর জেসমিনকে রামপুরা থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে তার স্বামী স্ত্রী জেসমিনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আদালত দুই দফা রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে নিজ হাতে তার দুই শিশু সন্তানকে গলা টিপে হত্যার করার স্বীকারোক্তি দেন জেসমিন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: