স্বদেশসময়টোয়েন্টিফোর.কম
নগরীর ডিসি হিলে চট্টগ্রাম একাডেমি আয়োজিত স্বাধীনতার বইমেলার উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বই পড়ার জন্যে, বই জ্ঞানের জন্যে। চেতনা সঞ্চারণে বইমেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ জন্য প্রয়োজন আমাদের চারপাশে বইমেলার আয়োজন। বই বাচ্চার ওষুধ বা দুধ নয় যে বাবা-মারা কেনার জন্যে পাগল হবেন। বই দেখার, বই পড়ার সুযোগ থাকলে তবেই পছন্দের বইটি কিনে নেন পাঠক। বই কিনতে না পারলেও চেয়ে চিন্তে পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়। তখন গুরুজনেরাও ছেলেমেয়েদের বই কিনে দেন। এভাবে বই জনে জনে চেতনা সঞ্চার করে। বইমেলা আমাদের চারপাশে সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠুক।
নিজের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ও বই সংগ্রহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বই পড়ার জন্যে নিয়ে গেলে অনেক সময় ফেরত পাওয়া যায় না। চাইতেও পারি না। পরে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য বই আমরা পড়ার জন্যে নিয়ে এসে ফেরত দিতাম না। এভাবে চলার মধ্যে এক ধরনের ভালোবাসা থাকে। সেই ভালোবাসা ধীরে ধীরে বইয়ের প্রতি সংক্রমিত হয়। আজকাল আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার ঝোঁক কমে যাচ্ছে। তারা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও আবিষ্কারে মত্ত থাকছে। বই নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।
বই পড়াকে উৎসাহিতকরণ, মননশীল লেখক সৃষ্টি এবং প্রকাশনা সংস্থাকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও চট্টগ্রাম একাডেমি এ বইমেলার আয়োজন করে। উদ্বোধনী দিনেই ২০টি স্টলে জমে উঠেছে বইমেলা।
চট্টগ্রাম একাডেমির চেয়ারম্যান ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, গবেষক ড. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম কমু, একাডেমির মহাপরিচালক নেছার আহমদ ও বইমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ারা আলম।
খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চ অসাধারণ একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। এতে তিনি প্রথমে মুক্তির কথা বলেন। পরে স্বাধীনতার। বাঙালি জাতির হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষা ছিল মুক্তি। কিন্তু স্বাধীনতা ছাড়া সেই মুক্তি অসম্ভব। তাই তিনি বাঙালিকে প্রকৃত অর্থে মুক্তি দিতে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আর সেই মুক্তির জন্যে দরকার বই, জ্ঞান। জ্ঞান ছাড়া সেই মুক্তি সহজে পাওয়া যায় না। আজকাল ছেলেমেয়েরা কম্পিউটার নিয়ে রাত জেগে কাজ করছে। এটা মন্দ না। প্রকৃত আলো হলে ভালো। কিন্তু এর জন্যেও তো বই দরকার। নিজেকে বিকশিত করতে, মহৎ শিল্প, সাহিত্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে বই পড়তে হবেই। আমাদের স্বাধীনতা, সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার তাৎপর্যপূর্ণ কাজটিই করে আসছে চট্টগ্রাম একাডেমি স্বাধীনতার বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে।
ড. মাহবুবুল হক বলেন, নানা ঐতিহ্যের মধ্যে চট্টগ্রামে নতুন ধারা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম একাডেমির স্বাধীনতার বইমেলা। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে প্রচেষ্টা চলছে। সেই প্রচেষ্টার একটি রূপ হলো এই বইমেলা। ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের সম্পদ। আজ তা হুমকির সম্মুখীন। বিদেশি সংস্কৃতি ঢুকে তা ধীরে ধীরে নষ্ট করছে। ভাষা বিকৃতি ও সংস্কৃতি রক্ষায় জাতীয় জাগরণ চাই। এর জন্য বইমেলা একটি বড় হাতিয়ার। নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে নতুন মাত্রায় এগিয়ে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে খেলোয়াড়দের মতো আমাদের সংস্কৃতিকে ও ভাষাকে বিশ্বে তুলে ধরতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বইমেলা উদযাপন পরিষদের মহাসচিব আমিনুর রশীদ কাদেরী। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বইমেলা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর মিঞা। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন বইমেলা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অরুণ শীল। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা থেকে আগত কথাসাহিত্যিক মোস্তফা হোসেইন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমু। উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে রাগেশ্রী।
সন্ধ্যা ৭টায় কবি স্বপন দত্তের সভাপতিত্বে কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি আনন্দ মোহন রক্ষিত, আকতার হোসাইন, দিলতাজ রহমান, মনুজর আহমদ, ফারহানা আনন্দময়ী, হাবীব সাখায়েৎ, নাজমুন নাহার প্রমুখ। একক সংগীত পরিবেশন করেন লোকসঙ্গীতশিল্পী মানস পাল চৌধুরী ও শ্রেয়সী রায়।
বুধবার (২৩ মার্চ) বিকেল পাঁচটায় শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম একাডেমি পুরস্কার ২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠান। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস, ইতিহাসবিদ ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক লোকসাহিত্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অর্থনীতিবিদ-প্রাবন্ধিক ড. মইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচক থাকবেন ইতিহাসবিদ ড. শামসুল হোসাইন, কথাসাহিত্যিক ড. হরিশংকর জলদাস, ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩৪৫ চেয়ারম্যান খালেদা এ আউয়াল, একাডেমির পরিচালক অজিত কুমার আইচ। সন্ধ্যা সাতটায় কবি খুরশীদ আনোয়ারের সভাপতিত্বে কবিতা পাঠ অনুষ্ঠান।
0 coment rios: