স্পেনের সেভিলাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন “ফাইনান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট (FfD4)”-এর প্রাক্কালে নাগরিক সমাজের দাবি সকল অবৈধ ও জনবিরোধী ঋণ এখনই বাতিল করুন
স্পেনের সেভিলাতে আগামী ৩০ জুন থেকে ৩ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফাইনান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট (FfD4)’- বিষয়ক চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন যা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সম্মেলনে দেশীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, ঋণনীতি সংস্কার ও জলবায়ু অর্থায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক আর্থিক ইস্যু আলোচিত হবে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য খাতের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করলে বর্তমান এসডিজির উন্নয়নের বিপরীতে একটি অন্ধকার চেহারা দেখা যায়। যেমন, জলবায়ু ঝুঁকিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৭ তম বিপদাপন্ন দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৬% (প্রায় ৯০ মিলিয়ন) জলবায়ু ইস্যুতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বাস করে। জাতীয় দারিদ্র্যের হার ১৮.৭% এবং যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাল্য বিবাহের বর্তমান হার ৫১.৪০%, ইত্যাদি।
এ প্রেক্ষাপটে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “ঋণ নয়, চাই ন্যায্যতা: অন্যায় ঋণ বাতিল করো, ব্যবস্থা বদলাও” শীর্ষক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা দুর্নীতিপূর্ণ কর নীতি, অবৈধ অর্থ পাচার ও ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের শর্ত পূরণে সরকার জনগণের উপর চাপ সৃষ্টি করে কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে, যা সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে বিপর্যস্ত করছে। বক্তারা জানান, ২০২৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ ৩৩% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ১৫ বছরে ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের চেয়ে বেশি। তারা এই পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানান। সেই সঙ্গে, বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবিও জানান।
এ মানববন্ধনটি “গ্লোবাল ডে অফ অ্যাকশন অন ফাইন্যান্স” আন্দোলনের অংশ হিসেবে এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (APMDD) এর উদ্যোগে কোস্ট ফাউন্ডেশন, ইক্যুইটিবিডি, টিইউএস, বিএসজেএফ, এনডিএফ, এনআরডিএস, সিপিআরডি, সিপিডি, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, উদয়ন বাংলাদেশ, প্রকাস ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুটিবিডি-সচিবালয় সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল আকন্দ।
ইক্যুটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ইউএই, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং বেলজিয়াম এই ধনী দেশগুলোকে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে এবং সেই অর্থ ফেরত দিতে হবে। তিনি বলেন, পূর্বে মেগা প্রকল্পে নেওয়া ঋণ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন না করেই গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি এসব অন্যায় ঋণ পরিশোধ না করা এবং মওকুফের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি গ্লোবাল টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানান, যাতে অবৈধ অর্থপাচার বন্ধ করা যায়। তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদের আলোচনার বাইরে যেন আর কোনো নতুন ঋণ অনুমোদন না হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের শরীফ জামিল বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বসে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দেশভিত্তিক অভিযোজন ব্যবস্থাপনার জন্য অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের দাবি জানানো উচিত। ইক্যুইটিবিডির মো. ইকবাল উদ্দিন বলেন, উন্নত দেশগুলো এখনো তাদের জিএনআই অনুপাতে অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এসিস্ট্যান্স (ODA) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি এবং তারা অনুদানের বদলে আমাদের উপর আরও ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। তিনি এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে তাদের যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়নের দাবি জানান। প্রাণ প্রকৃতি প্রতিবেশ পরিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটি র মূখপাত্র এবং এনডিএফের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার দাবি জানান। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও অর্থ ফেরতের দাবি তোলেন।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোহাম্মদ আলী জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থতার জন্য জরুরি ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। উদয়ন বাংলাদেশের শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, তাই জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রকাস-এর এএসএম আমানুল হাসান তৈমুর ঋণের ক্রমবর্ধমান বোঝা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইক্যুইটিবিডির ওমর ফারুক ভূঁইয়া আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কর সংস্কারের সমালোচনা করেন এবং অবিলম্বে সব দ্বিপাক্ষিক,বহুপাক্ষিক ও বেসরকারি অবৈধ ঋণ বাতিলের দাবি জানান। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন সাংবাদিক ফোরামের মো. মোতাহার হোসেন বলেন, জলবায়ু অর্থায়ন আমাদের অধিকার, দয়া নয়।