শেখ ওয়াসিমা তাবাস্সুম শমী। শমী ইব্রাহীম নামেই যার পরিচিতি।২০০৫ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারের মাধ্যমে মিডিয়াতে পথ চলা শুরু হলেও বতর্মানে দাপটের সাথে করে চলেছেন সাংবাদিকতা। এক যুগেরও বেশি সময়ধরে সাংবাদিকতায় থাকা শমী ইব্রাহীম কোভিডের সময়টাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করেছেন স্বাস্থ্যখাতের নানান দিকের সব রিপোর্ট। যার কারনে কোভিড ফ্রন্টলাইনার হিসেবে পেয়েছেন একাধিক এ্যাওয়ার্ড। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশী নানান সেমিনারে অংশ নিয়েও অর্জন করেছেন সুনাম।বর্তমানেও ব্যাস্ত সময় পার করছেন নিজের পেশা নিয়েই।একান্ত আলাপচারিতায় সাংবাদিকতার অতিত, বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় তার সাথে।
শিরোনাম: কাউকে অনুকরণ করে নয় বরং যে কাজ আপনাকে আনন্দ দেবে সেটাই করা উচিত বলে মত শমী ইব্রাহীমের।
সাংবাদিক হিসেবে কাজ করবেন এটা কি আগে থেকেই ভেবেছিলেন?
মিডিয়ায় শুরুটা আমার গ্লামার ওয়ার্ল্ড এর মাধ্যমে ২০০৫ সালে। মডেলিং, নাটক, সিনেমা বরাবরই কম টানতো আমায়। তবে ক্যামেরাটাকে কেন যেন ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই আর ছাড়া হয়নি, বরং অন্য মাধ্যমে ক্যামেরার সাথেই শুরু হয় পথ চলা। আমি বিশ্বাস করি কাউকে অনুকরণ করে নয় বরং যে কাজটি আপনাকে আনন্দ দেবে আপনার সেটাই করা উচিত। সাংবাদিকতা আমাকে আনন্দ দেয়। এটা আমার ভালো লাগা ও ভালোবাসার জায়গা।প্রতিদিন এই পেশায় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আমি উপোভোগ করি।সাংবাদিকতা এখন আর কেবল পেশা নয় আমার কাছে এটা রিতিমত এখন নেশায় পরিনত হয়েছে।
নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে তৈরী করতে কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
সাংবাদিকতা একটা নেশা। আর এই নেশার জন্য সবার আগে আপনাকে নিউজ ম্যান হয়ে ওঠা জরুরী। এই পেশায় যার খবরের সোর্স যত বেশি সে তত ভালো সাংবাদিক।আমি যখন এই পেশায় আসি তখন রাতের ডিউটিতে মেয়েদের দেখাই যেত না।এই সুযোগটি আমি শতভাগ কাজে লাগিয়েছিলাম। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সোর্স বিল্ডআপের জন্য আমি টানা ছয় মাস নাইট ডিউটি করেছিলাম। যার ফলও পেয়েছিলাম। এছাড়া ভালো সাংবাদিক হতে হলে আপনাকে প্রচুর পড়ালেখাও করতে হবে। বিশেষ করে দৈনিক পত্রিকারদিকে নজরটা রাখতেই হবে। এছাড়া দেশী বিদেশী নিউজ চ্যানেলগুলোতেও নজর রাখতে হবে সমানভাবে। ক্যারিয়ারের ১৫ বছর এই পেশায় পার করার পরেও এখনও শিখছি। জানিনা, কবে একজন ভালো সাংবাদিক হতে পারবো। তবে চেষ্টা চলমান থাকবে।
সাংবাদিকতায় কোন জায়গাটিতে কাজ করতে স্বাস্চ্ছন্দবোধ করেন?
ক্রাইম রিপোর্টিং দিয়ে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়। খুব উপভোগও করতাম এই জায়গাটা। প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা আর খবরে শিখেছি অনেক। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য বিটের রিপোর্টার হওয়ার সুবাদে কোভিডের সময়টিতে কাজ করতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি আমি। সে সময়ের বাস্তবতায় শিখেছি অনেক কিছু। স্বাস্থ্যের সাথে সাথে নারী, শিশু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে খুব ভালোবাসি আমি।
উপস্থাপক শমী নাকি সাংবাদিক শমী? কোন শমী কে বেশি পছন্দ?
বরাবরই সাংবাদিক শমীকে পছন্দ আমার। সাংবাদিকতায় প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ভালো লাগে আমার। উপস্থাপনা ভালো লাগে তবে মাঠের সাংবাদিকতা বেশি ইনজয় করি আমি।
দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে সংগ্রাম করে নিজের একটা অবস্থান তৈরী করেছেন। এটা ভাবতে কেমন লাগে?
খুব ভালো লাগে, এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আজকের শমীকে এই জায়গায় আনতে অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে যা এখনও চলমান। আর এই পথটা মসৃণ করেছে আমার পরিবার। ওয়ার্কিং মাদারদের কাজে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। এটা শুধু ওয়ার্কিং মাদাররাই জানে। তবে আমি এদিক থেকে অনেক ভাগ্যবান। আমার কাজে যেন কোন কিছুই বাঁধা না হয় তার জন্য আমার পার্টনার তার শতভাগ সাপোর্টটাই দেন। পাশাপাশি কনসিভ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি যে সব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি বা করছি তারা সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছেন বলেই আজ আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি।
নতুন যারা এই পেশায় আসতে চান তাদের উদ্দ্যেশে কি বলবেন?
প্রথমেই আমি তাদেরকে বলবো, সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নয়, বরং নেশা হিসেবে নিতে পারলেই যেন নতুনরা এই পেশায় আসেন। কারন সৎ সাংবাদিকতায় অন্য পেশার মত অর্থ থাকেনা তবে সম্মানের কমতি হয় না।
ভবিষ্যতে কি অন্য কোন ধারায় কাজ করার ইচ্ছা আছে?
জীবনের ১৫ টি বছর এখানে সময় দিয়ে এখন আর অন্য কোথাও যেতে চাইনা। তাছাড়া সাংবাদিকতা এখন রক্তে মিশে গেছে। তবে আমার মত ওয়ার্কিং মাদারদের জন্য কিছু করতে চাই। তাই একটি ডে কেয়ার চালু করেছিলাম। সেটিতে আরও মনোযোগী হতে চাই। এর পাশাপাশি অনলাইনে খুব ছোট দুটি উদ্যোগ আছে, যা স্বপ্নের মতই বড় করে তুলতে চাই।
ছবি তুলেছেন: মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু